ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। এখন চলে ২০২২ সালের আগস্ট। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নাধীন জুলাই-২০২২ পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি এখনো অর্ধেক পেরোয়নি। এরই মধ্যে তিন দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১১ সালে প্রথম দিকে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সব শেষ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। আর এতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রকল্পের প্রথম অংশ বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত চলতি বছর ডিসেম্বরে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সেতু বিভাগ। ঢাকা-কুতুবখালী পর্যন্ত এ প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রথম অংশের দৈর্ঘ্য ৭ কিলোমিটার। গতকাল ২৮ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত এ অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৯ শতাংশ। বলা হয় রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনের জন্য এটি একটি বৃহৎ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দর থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। এতে অবশ্য উচ্চ হারে টোল দিতে হবে ব্যবহারকারীদের। সেতু বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গতকাল এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, ‘আপাতত আমরা বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছি। গতকাল পর্যন্ত এ অংশের অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ। আর পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। মূলত বর্তমানে কাজ চলছে বিমনাবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত। বাকি অংশের মূল কাজ শুরু হবে ডিসেম্বরের পর।’ সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, তিনটি অংশের মধ্যে প্রথম অংশ বিমানবন্দর থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত মোট দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। এ অংশের অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ। দ্বিতীয় অংশ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। এ অংশের অগ্রগতি ২৬ শতাংশ। তৃতীয় অংশ মগবাজার-যাত্রাবাড়ী হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার। এ অংশের অগ্রগতি ১০ শতাংশ।
বিমানবন্দর থেকে বনানী রেলগেট অংশের মূল কাজ শেষ হয়েছে। চার মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে। তাই ডিসেম্বরে এ অংশটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথমে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত শতভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কথা মাথায় রেখে চলতি বছরই সাড়ে ৭ কিলোমিটার খুলে দেওয়া হবে। বাকি অংশ ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। সেতু বিভাগের তথ্যমতে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয় ২০০৯ সালে। ২০১১ সালের ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রুট ও অর্থায়ন জটিলতায় তা আটকে যায়। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালে এক্সপ্রেসওয়ের রুট সংশোধন করা হয়। সংশোধনী আনা হয় নকশাতেও। এতে ব্যয়ও বেড়ে যায়। পাশাপাশি প্রলম্বিত হয় সময়। ফলে দৃশ্যত কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের পর। জুলাই-২০২২ পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। আর প্রথম অংশ বিমানবন্দর থেকে বনানীর অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ, যা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা করছে সেতু বিভাগ।সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিয়ে চলাচল করবে সব ধরনের যানবাহন। প্রকল্প ব্যয় ও টোলের হার বৃদ্ধিবিষয়ক প্রস্তাব ২০১৩ সালের নভেম্বরে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করা হয়। তবে প্রকল্প চালুর আগে সেটি সংশোধিত হয়ে আবার অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আসবে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী টোল ধরা হয়েছে প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য মোটরগাড়িতে ১২৫ টাকা, যাত্রীবাহী বাসে ২৫০ টাকা, ছয় চাকার ট্রাকে ৫০০ টাকা আর ছয় চাকার বেশি ট্রাকের জন্য ৬২৫ টাকা। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে তিন বছর পর পর টোলের হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ২৫ বছর টোল আদায় করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তবে টোলের এ হার এখনো চূড়ান্ত নয়।
এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ বিমানবন্দর-বনানী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ এগিয়ে চলেছে। আশা করি আমরা তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খুলে দিতে পারব।’ পুরো প্রকল্প শেষ হতে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত লেগে যাবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, পুরো প্রকল্প শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। উড়ালসড়কটির প্রথম অংশের ১ হাজার ৪৮২টি পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। ৩২৯টি পাইল ক্যাপের মধ্যে ২৯০টির কাজ আর ৩২৯টি কলামের মধ্যে ২৮৫টির কাজ শেষ হয়েছে। ৩২৯টি ক্রস-বিমের মধ্যে ২৩৫টি, ৩ হাজার ৭২টি আই গার্ডারের মধ্যে ১ হাজার ৪৫২টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া বনানী থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ২ হাজার ১৭৯টি পাইলের মধ্যে ১ হাজার ২৫৩টি; ৬৩১টি পাইল ক্যাপের মধ্যে ১২৫টি; ৬৩১টি কলামের মধ্যে ৯৯টি ও তিনটি ক্রস-বিমের কাজ শেষ হয়েছে।
Leave a Reply